পেকুয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনি : হত্যাকান্ডের রহস্য ও চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া :

পেকুয়ায় শিলখালীতে গণপিটুনিতে নিহত জিয়াবুলের স্ত্রী কাউছার জন্নাত যাবেন কোর্টে। চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে কাউছার জন্নাতের স্বামী জিয়াবুল হোছাইন (২৭) নিহত হয়েছে। নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পরে ওই হত্যাকান্ডের রহস্য ও চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়েছে।

পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলাও রুজু আছে। তবে হত্যাকান্ড ও মামলা নিয়ে দু’ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। জিয়াবুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় তড়িঘড়ি করে থানায় এজাহার পৌছানো হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছিল তিনটি লিখিত এজাহার। ১ম ধাপে এজাহারটি পৌছান নিহতের স্ত্রী কাউছার জন্নাত। দ্বিতীয় দফায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী (ডিভোর্স) প্রাপ্ত মায়ানমারের এক নাগরিক মহিলাকে দিয়েও এজাহার পৌছানো হয়েছিল।

৩য় দফায় নিহত জিয়াবুল হোছাইনের মা দিলোয়ারা বেগম পেকুয়া থানায় বাদী হয়ে এজাহার পৌছান। মায়ের প্রেরিত ওই এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডভূক্ত হয়েছে। তবে মামলা নিয়ে সন্তুষ্ট নন নিহত জিয়াবুল হোছাইনের স্ত্রী কাউছার জন্নাত। ওই নারী জানান, আমার স্বামীকে নিষ্টুরভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। আমার স্বামী টইটং থেকে শিলখালীর লম্বামোড়ায় এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। মসজিদ থেকে বের হয়ে স্থানীয় ইউপির সদস্য আবদুল মালেক আমার স্বামীর উপর হামলে পড়ে। এ সময় তার নেতৃত্বে বিপুল দুবৃর্ত্তরা আমার স্বামীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালান। এ সময় লাঠি, কিল,ঘুসি ও ধারালো অস্ত্র শ^স্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করানো হয়। মূলত ইউপি সদস্য মালেক মেম্বার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানুষকে উসকানি দেয়।

এমনকি ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়ে ১ম হামলা শুরু করে ওই মেম্বার। এরপর উত্তেজিত লোকজন এলোপাতাড়ি মারধর করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ হামলা ও নিহতের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন মালেক মেম্বার। অথচ কি কারনে তাকে এজাহার থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এর বড় ধরনের রহস্য রয়েছে।

আমি জানি এ মামলায় বিপুল টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। টাকার ছড়াছড়িতে আসল হত্যাকারীরা মামলায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি। আমি মনে করছি এটি ন্যায় বিচারের অন্তরায়। আমি কোর্টে গিয়ে মূল হত্যাকারীদের অন্তর্ভূক্তির জন্য সম্পূরক পিটিশন গ্রহণের জন্য বিচারিক আদালতে আশ্রয় নেব। এ দিকে গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা ও পরবর্তীতে থানায় মামলা রেকর্ড নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ঘটনাস্থল লম্বামোড়ার মানুষ। ২৮ অক্টোবর ভোরে গণপিটুনির এ ঘটনা ঘটে। পেকুয়া থানায় মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় ২ জনকে আসামী করে।

লম্বামোড়ার কোমাল হোছাইনের স্ত্রী সাহারা খাতুন (৬০) জানান, আমার ২ ছেলেকে আসামী করে। আমার ছেলেদের কোন দোষ নেই। চোর ডুকেছে বাড়িতে। এরপর লোকজন ধাওয়া দিয়ে তাকে ধরে ফেলে। ফজরের নামাজের পর মালেক মেম্বার চোরকে রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর কয়েক শত মানুষ তাকে মেরেছে।

কিন্তু আসামী হয়েছে আমার দুই ছেলে। বেলাল উদ্দিনের স্ত্রী মর্তুজা বেগম জানান, এখানে মূল হোতারা অধরা থেকে গেছে। মোক্তার হোছাইন ও দেলোয়ার এরা দুই ভাই। চোর ডুকেছে এদের বাড়িতে। চোর চোর চিৎকার করার পর ধাওয়া দিয়ে তাকে ধরে ফেলে। এরপর চৌকিদার ছাবেরকে সোপর্দ করে। রাতভর তাকে কেউ টুকা দেয়নি। কিন্তু মেম্বারের উসকানিতে শত শত মানুষ ক্ষেপে গিয়ে গণপিটুনি দেয়। এখানে আসল অপরাধীরা টাকা মেরে পার পেয়ে গেছে।

বাদশার স্ত্রী মালেকা বেগম, আবুল কাসেমের স্ত্রী রেজিয়া বেগম, মোক্তার হোছাইনের স্ত্রী নাসিমা বেগম, আবু ছিদ্দিকের স্ত্রী জাহেদা বেগম, ছব্বির আহমদের পুত্র কাইছার, মোহাম্মদ আলীর পুত্র লশকর আলী, ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তানিয়া, ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী সায়মা জন্নাতসহ ২ শতাধিক নারী-পুরুষ লম্বামোড়ায় জড়ো হয়ে ওই ঘটনার আসল ক্লু বের করার জন্য জোরালো বক্তব্য দেন।

তারা জানান, এখানে টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। মালেক মেম্বার এ ঘটনার মূল হোতা। চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইনসহ একটি শক্তিশালী পক্ষ মালেককে বাঁচাতে মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মূলত এরা টাকা মেরে মামলা থেকে বাদ যান। এ ২ জন আসামী হচ্ছেন নিরাপরাধ।

ইউপি সদস্য আবদুল মালেক জানান, আমি চিকিৎসা করিয়েছি। এটি হচ্ছে আমার অপরাধ। আমি মূল হোতা নয়। পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, মামলাটি অধিকতর তদন্ত করা হবে। তদন্ত চলমান রয়েছে।